আজ || বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  তালায় খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ       তালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাঝে হাঁসের বাচ্চা বিতরণ       তালায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রতিযোগিতা       তালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের উদ্বোধন       তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের সমর্থনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত       তালায় অসুস্থ বন্ধুর জন্য ৩০ হাজার টাকা দিলেন বন্ধুরা       তালায় তিন দিনব্যাপী কৃষি মেলার সমাপনী       সাতক্ষীরায় বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত       তালায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক অবহিতকরণ সভা       তালায় আরএমটিপি প্রকল্পের বাজার সংযোগ সভা অনুষ্ঠিত    
 

 বিনম্র শ্রদ্ধা


আজ ক্ষণজন্মা মহান পূরুষ, আধুনিক কপিলমুনির রুপকার, দানবীর স্বর্গীয় রায়সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু’র ১৩২ তম জন্মজয়ন্তী

আজ আধুনিক কপিলমুনির রুপকার, দানবীর স্বর্গীয় রায়সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু’র ১৩২ তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৯০ সালের ২০মে, ১২৯৬ বঙ্গাব্দের ২৬ বৈশাখ শুক্লাষ্টমী তিথিতে জম্নগ্রহন করেন। পিতা যাদব চন্দ্র সাধু, মাতা সহচরী দেবী। পিতা মাতার চার পুত্রের মধ্যে তৃতীয় তিনি।

বিশ্ব বরেণ্য বৈজ্ঞানিক স্যার পিসি রায় প্রতিষ্ঠিত আর কে বি কে হরিশচন্দ্র ইনষ্টিটিউটে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠেন তিনি,তখনই তাঁর ছাত্র জীবনের যবনিকা ঘটে। কিন্তু তিনি প্রকৃতি থেকে যে জ্ঞান লাভ করেন তা তাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ শিখরে নিয়ে যায়।
পারিবারিক ভাবে তাঁর বিয়ে হয় পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। ৪ পুত্র আর ৩ কন্যা সন্তাানের জনক তিনি। কনিষ্ঠপুত্র বজ্র বিহারী সাধুর অকাল মৃত্যুতে তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েন। অন্য ৩ পুত্র গোষ্ট বিহারী সাধু, যমুনা বিহারী সাধু ও গোলক বিহারী সাধু পরিণত বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। কপিলমুনি বাজারেই রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ব্যবসা জীবনের উত্থান। এলাকার মানুষের ভাগ্যন্নোয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি পূর্বপুরুষদের নামে প্রতিষ্ঠা করেন কপিলমুনির বহু জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। মাতার নামানুসারে ১৯২৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির স্কুল, যা উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। অর্থনৈতিক ভাবে এলাকার মানুষদের সাবলম্বী করে তোলার লক্ষে অমৃতময়ী টেকনিক্যাল স্কুল, লেদ, তাঁত, সুগার মেশিন স্থাপন ও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করেন। রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু তৎকালীণ ৩ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য নিজ অর্থে পিতামহের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ২০ শয্যা ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। কালক্রমে হাসপাতালটি সরকারি হওয়ার পর ১০শয্যা করা হয়। এমনকি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকার হাসপাতালটির দিকে উন্নয়নের দৃষ্টি দিয়ে আজও তাকায়নি এমনই অভিযোগ এলাকার হাজারো মানুষের। সময়টা ছিল এমন যে, বৃহত্তর খুলনা জেলায় কোন এক্স-রে মেশিন ছিল না। তাই পিতামহের নামে নিজের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ভরতচন্দ্র হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন বসানোর জন্য তিনি জার্মানীতে মেশিনের অর্ডার দেন। মেশিনটি দেশে আনা হয়, সে সময় খুলনা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুরোধে ১৯৩৬ সালের ৮জানুয়ারি খুলনা সদর হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মাণ করে ঐ ভবনেই এক্স-রে মেশিনটি স্থাপন করেন তিনি।
রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর কর্মময় জীবন সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধানে একে একে বেরিয়ে এসেছে সমাজ সেবার এক বিরল ইতিহাস। কপোতাক্ষ নদের উপর নিজ অর্থে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু অনেকের বিরোধিতার কারণে সেটা হয়নি, তবুও নিরাশ হননি। তিনি সেতু নির্মাণের জন্য কলকাতার সেন্ট্রাল ব্যাংকে লক্ষাধিক টাকা রেখে যান। রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু জনস্বার্থে বাজারের মধ্যভাগে প্রায় ২ একর জমিতে পুকুর খনন করেন। যার নাম দেওয়া হয় সহচরী সরোবর। নিজ প্রতিষ্ঠিত দাতব্য চিকিৎসালয় ও ভরতচন্দ্র হাসপাতালের জন্য তৎকালীন খুলনা জেলা পরিষদে ৩২ হাজার টাকা রেখে যান। কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির এর অর্থ যোগানের জন্য কলকাতা রিজার্ভ ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় রাখেন। বাংলা ১৩৩৯ সালে স্থাপন করেন “বিনোদগঞ্জ”।

বাংলা ১৩৩৮ সালের ২ কার্ত্তিক প্রতিষ্ঠা করেন সার্বজনীন বেদ মন্দির। বৃটিশ ভারতের রাজত্বে চার কোণে অবস্থিত বেদ মন্দিরের মধ্যে দক্ষিণ পূর্বক কোণের ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য মহা পবিত্র ‘বেদ মন্দির’ এটি। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি সমাজ সেবায় আত্ম নিয়োগের উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন। যেটি তৎকালীণ ব্রিটিশ সরকারের নজরে আসে, আর এ জন্যই তাঁকে ‘রায় সাহেব’ উপাধীতে ভূষিত করা হয়। সবকিছু ঠিক ঠাক চলছিল, কিন্তুু হঠাৎ করে যেন ইহলোক থেকে বিদায়ের সুর বেজে উঠলো তাঁর হৃদয় মন্দিরে। জীবনের স্বল্প সময়ে অধিক শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়ে শরীরটা যেন একেবারেই ভেঙ্গে যায় তাঁর। ভাগ্যটা এতোই প্রতিকূল যে, বেরী বেরী রোগ এই মহান মানুষটিকে পৃথিবী নামের কর্মক্ষেত্র থেকে কেড়ে নিল। কলকাতার সকল চিকিৎসকের সাধনা বিফল করে ক্ষণজন্মা মহান পূরুষ ১৩৪১ সনের ৩রা মাঘ ইহলোক থেকে বিদায় নেন।


Top